বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দক্ষিণাঞ্চলের রাজনৈতিক সচেতন বলেখ্যাত বরিশাল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য, আধুনিক বরিশাল নগরী গড়ার একমাত্র রূপকার, সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আ’লীগের সভাপতি আলহাজ্ব শওকত হোসেন হিরণ। ২০১৪ সালের ৯ এপ্রিল সকালে মাত্র ৫৮ বছর বয়সে টানা ৩২ বছরের রাজনৈতিক জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে ১৯দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে সকল প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে তিনি (হিরণ) পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন। বরিশালের একমাত্র মুকুটহীন সম্রাট আলহাজ্ব শওকত হোসেন হিরণের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এই লেখা। নগরীর সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কাজল ঘোষ সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দেয়া তথ্যে জানা গেছে, বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার কালীশুরি ইউনিয়নের আড়াইনাও গ্রামের বাসিন্দা ও পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর আব্দুল হাসেম সরদার এবং গৃহিনী জয়নব বেগম দম্পত্তির ৪ পুত্র ও ৬ কন্যার মধ্যে শওকত হোসেন হিরণ ছিলেন তৃতীয়। বরিশাল শহরের আলেকান্দা এলাকার নানা বাড়িতে ১৯৫৬ সালের ১৫ অক্টোবর শওকত হোসেন হিরণ জন্মগ্রহণ করেন। লেখাপড়ার সুবাধে ছোট বেলা থেকেই নানা বাড়ি বরিশাল শহরে তার বসবাস। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এরশাদের ১৮ দফা কর্মসূচীর দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বরিশালের রাজপথে নতুন ধারা ছাত্র সমাজের ব্যানারে নেতৃত্ব দেয়ার মাধ্যমেই তার (হিরণের) রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ। এরপর আর পিছু ফিরতে হয়নি তাকে। একে একে যুব সংহতি, ১৯৮৪ সালে ফ্রন্টেরও বরিশালের নেতৃত্বদানকারী নেতা ছিলেন তিনি। ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি গঠনের পর শওকত হোসেন হিরণ রাজনীতিতে আরো সক্রিয় হন। সে সময় তিনি (হিরণ) বরিশাল শহর জাতীয় পার্টির সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৫ সালে বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় নির্বাচনে মাত্র ২৯ বছর বয়সী শওকত হোসেন হিরণ বিপুল ভোটের ব্যবধানে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেই থেকেই জনপ্রতিনিধি হিসেবে তার পথচলা। জনপ্রতিনিধি হিসেবে বেশ স্বল্পসময়েই হিরণ বরিশাল শহরবাসীর হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন। ১৯৯৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর মাধ্যমে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে শওকত হোসেন হিরণ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ফলে সহজেই বরিশাল শহর আ’লীগের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এরপর থেকেই পাল্টে যেতে শুরু করে বরিশাল মহানগরীর রাজনৈতিক দৃশ্যপট। প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে দলীয় নেতাকর্মীদের একত্রিত করার মাধ্যমে রাজপথে তার ছিলো বলিষ্ঠ ভূমিকা। তিনি ছিলেন আন্দোলন সংগ্রামের ১৪ দলের সমন্ময়ক। যে কারনে বিএনপি অধ্যুষিত বরিশাল নগরী থেকে ২০০৮ সালের ওয়ান ইলেভেন সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে শওকত হোসেন হিরণ জনগনের বিপুল ভোটের মাধ্যমে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনিই প্রথম নগরীতে সকল দলের অংশগ্রহণে সহঅবস্থানের রাজনীতির ধারা চালু করেছেন। হিরণের নিরলস প্রচেষ্ঠার কারনেই বরিশাল নগরী সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও ছিনতাইকারী মুক্ত হয়েছিলো। অবশ্য এজন্য তাকে দলের কতিপয় নেতার চোখের শুলও হতে হয়েছিলো। সূত্রে আরো জানা গেছে, ১৯৭৫ সালের পর থেকে বরিশাল নগরীছিলো সকল প্রকার উন্নয়ন বঞ্চিত। সিটি কর্পোরেশনে আ’লীগ সমর্থিত মেয়র হিসেবে হিরণ-ই একমাত্র মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তার দুরদর্শীতার কারনেই রাতারাতি পাল্টে যেতে শুরু করে নগরবাসীর জীবনচিত্র। নগরীতে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন হিরণ। বরিশালকে তিনি একটি শিশু বান্ধব নগরীতে পরিনত করেছেন। এছাড়া শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন, নগরবাসীর জন্য একাধিকস্থানে বিনোদন কেন্দ্র, যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতিকরনসহ ভ্রমন পিপাসুদের জন্য তিনি বরিশালকে একটি আদর্শ নগরীতে পরিনত করেছেন। ফলশ্রুতিতে দলমত নির্বিশেষে তিনি চলে গিয়েছিলেন সাধারন মানুষের হৃদয়ের মনিকোঠায়। রাজনীতিতে তিনি (হিরণ) দীর্ঘদিন বরিশাল শহর আ’লীগের সাধারন সম্পাদক, মহানগর আ’লীগের আহবায়ক ও ২০১২ সালে কাউন্সিলের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দলের গুরু দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শওকত হোসেন হিরণ বরিশাল-৫ (সদর) আসন থেকে বিনাপ্রতিদ্বন্ধীতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। শওকত হোসেন হিরন শুধু নামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরিশালের মানুষের কাছে আস্থার এবং নির্ভরতার প্রতীক হতে পেরেছিলেন। কথা এবং কাজের মেলবন্ধন তিনি তৈরি করে দেখিয়েছিলেন, মাত্র সাড়ে চার বছরে তিনি একটি মফস্বল শহর কে আমূল পরিবর্তন করে ছিলেন, যেটা নগরবাশীর কাছে ছিল বিস্ময় জাগানিয়া। সত্যিকার অর্থেই তিনি একটি তিলোত্তমা নগরী উপহার দিতে পেরেছিলেন।যদি আলোকসজ্জার কথা বলা হয়, মেয়র নাইট, কিংবা নৌকাবাইচ, দুই লেইনের রাস্তা, এমন অসংখ্য প্রথম এর সাথে নগরবাসীকে পরিচয় করে দিয়েছিলেন শওকত হোসেন হিরন। এমনকি সূর্যোদয়ের পূর্বে নগরের বর্জ্য পরিষ্কার করিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। বরিশাল মহানগরের সাবেক সভাপতি, সাবেক মেয়র ও সাবেক সংসদ সদস্য শওকত হোসেন হিরনের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী ম্লান হয়ে যাচ্ছে বর্তমান বৈশি^ক মহামারী করোনার কারণে। যার কারনে এবার বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগ থেকে কোন কর্মসূচি রাখা হয়নি বলে বিষয়টি নিশ্চিত করে মহানগর সভাপতি এ্যাড, একে এম জাহাঙ্গীর হোসাইন। তিনি বলেন, বর্তমান করোনাকালীন সময়ে একেইতো স্বাস্থবিধি চলার নির্দেশ থাকার কারনে লোক সমাগম করা যাবে না। সে কারনেই দলের পক্ষ থেকে এই মুহুর্তে কিছুই করা হবে না।
Leave a Reply